হামাসের গুলিবৃষ্টির মধ্যে গাড়ির নিচে গা-ঢাকা, রুদ্ধশ্বাস ড্রাইভিং, প্রেমিক-প্রেমিকা জীবনে ফের


সৌমিক সাহা, তেল আভিভ:  ‘গাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। চারিদিক থেকে ক্রমাগত গুলি ছুটে আসছিল। ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা। গাড়ির ভিতরে বসে আমরা টের পাচ্ছিলাম, গাড়ির গায়ে বুলেট এসে লাগছে। তার মধ্য়ে দিয়ে রোনাল্ড গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। থামছে না। এদিক ওদিক থেকে আসা গুলির ঝড় পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল গাড়ি।’ 

প্রাণ হাতে করে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন যুগলে ( Israel Hamas War ) । বলা ভাল, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু পেরোচ্ছিলেন তাঁরা। দিনটা ছিল ৭ অক্টোবর। এক বিভীষিকার সাক্ষী ছিল ইজ়রায়েলবাসী। সেদিনই ইজ়রায়েলের ( Israel ) কিবুৎজ রিমে মিউজিক ফেস্টিভ্য়াল ( music festival )চলাকালীন হামলা চালিয়েছিল হামাস জঙ্গিরা। যাতে মৃত্য়ু হয় বহু মানুষের।

হামাস জঙ্গিদের সেই হামলা থেকে, কপালজোরে প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন, এমন দুজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এবিপি আনন্দ-র প্রতিনিধির! তাঁদের বেঁচে ফেরার কাহিনি, হার মানাতে পারে যে কোনও থ্রিলারকেও! এই মিউজিক ফেস্টিভ্যালে গিয়েই প্রায় ২৬০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। যে কয়েকজন ওই মৃত্য়ুপুরী থেকে রেহাই পেয়েছেন, তার মধ্যে এই যুগল । 

ইজরায়েলি নাগরিক দানিয়েলা বলেন, ‘আমরা যেভাবে পালিয়েছি, সেটা জেমস বন্ডের ছবির মতো! রোনাল্ড আমার পাশে বসে ছিল। ও নায়কের মতো কাজ করেছে। আমাদের গাড়িটা বড়জোড় শহরের রাস্তায় চলার মতো। সেটাকে মাঠ পেরিয়ে, জঙ্গিদের মধ্য়ে দিয়ে, রাস্তা দিয়ে চালিয়েছে।’ 

দানিয়েলা এবং রোনাল্ড। প্রেমিক-প্রেমিকা। দুজনে একসঙ্গে গেছিলেন মিউজিক ফেস্টিভ্য়ালে। তখনই হামলা চালায় হামাস জঙ্গিরা। বৃষ্টির মতো উড়ে আসতে থাকে গুলি। তার মধ্য়েই কোনওমতে প্রেমিকাকে গাড়িতে নিয়ে, বেরিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা করেন রোনাল্ড। দানিয়েলা বলছিলেন ,  ‘জঙ্গিরা আমাদের লক্ষ্য় করে অবিরাম গুলি চালাচ্ছিল। রোনাল্ড গাড়িটাকে একবার এদিক, একবার ওদিক করে কোনওমতে বাঁচিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। জঙ্গিরা সংখ্য়ায় একশোর বেশি ছিল। তাদের হাতে অত্য়াধুনিক সব অস্ত্র ছিল। গাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। ক্রমাগত গুলি ছুটে আসছিল। গাড়ির ভিতরে বসে আমরা টের পাচ্ছিলাম, গাড়ির গায়ে বুলেট এসে লাগছে। তার মধ্য়ে দিয়ে রোনাল্ড গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়।’ 

চারিদিকে তখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। প্রাণ আর কতক্ষণ তাই জানেন না দুজনে। মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখেছিলেন দুজনে।  হামাস হামলার হাত থেকে বাঁচতে যে যেদিক পারছে, পাগলের মতো ছুটছিল যখন, তখন এক মুহূর্তের জন্য় দানিয়েলাকে ছাড়েননি রোনাল্ড।

 রোনাল্ড বলছিলেন, ‘ দানিয়েলা আমার ডান দিকে বসে ছিল। আমাকে ওখান থেকে বেরোতে হত। তখন আমার মা ফোনে ছিলেন।’ সঙ্গে সঙ্গে দানিয়েলা বললেন, ‘ পালাতে ৪ ঘণ্টা লেগেছিল। তার মধ্য়ে ৩ ঘণ্টা ওর মা-বাবা ফোনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এমনভাবে যেন তাঁরা আমাদের সঙ্গে গাড়িতেই আছেন। প্রতি মুহূর্তে তাঁরা আমাদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। আমরা যা করেছি, তার অর্ধেক কৃতিত্ব তাঁদের।’

একটা সময়ে প্রাণে বাঁচতে গাড়ির নিচে লুকিয়ে ছিলেন দুজনে। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে পালাতে গিয়ে এক হামাস জঙ্গিকে ধাক্কাও মারেন রোনাল্ড। কিনতু, তখন গাড়ি লক্ষ্য় করে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি! একটা গুলি লাগলেই সব শেষ! তাই কিছু ভাবার মতো অবস্থা ছিল না।

 রোনাল্ড বলছিলেন, ‘ একটা সময়ে আমরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির নিচে লুকিয়ে ছিলাম। ওখানে একজন ইজরায়েলি সেনাও ছিলেন। আমরা প্রায় এক ঘণ্টা ওই অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু, কেউ ওই সেনাকর্মীকে বাঁচাতে আসেনি। আমার মনে হল, কেউ তাঁকেই বাঁচাতে না এলে, আমাদের কী হবে। তখন আমরা বেরিয়ে এসে পালাই।’ 

দানিয়েলা বলেন, গাড়ি উল্টে ব্য়ারিকেড করে রাখা হয়েছিল। সেসব বাঁচাতে রোনাল্ড কখনও গাড়ি নিয়ে রাস্তায় উঠছিল, কখনও রাস্তা থেকে নেমে যাচ্ছিল। এক জঙ্গিকে ধাক্কাও মারে। আমরা জানি না, সে বেঁচেছে কিনা।’ 

দানিয়েলা এবং রোনাল্ডের ফিরে আসাটা শুধু একটা সাহসিকতার নজির নয়। যুদ্ধের মধ্য়েও ভালবাসার জয়। হাজারও মৃত্য়ুর হাহাকারের মধ্য়েও যা বেঁচে থাকবে উজ্জ্বল হয়ে। 

আরও পড়ুন :

গাজার হাসপাতালে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ৫০০, অভিযোগের আঙুল ইজরায়েলের দিকে

 



Source link

https://sluicebigheartedpeevish.com/u4j5ka2p?key=f9b1fb0aab078545b23fc443bdb5baad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: