জমি অধিগ্রহণ পর্বে বিশেষ চুক্তি, যে শর্ত সামনে রেখেই ক্ষতিপূরণ দাবি টাটাদের


কলকাতা: শিল্প না হওয়ায় টাটারা চলে গিয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু দেড় দশক পরও সিঙ্গুর ক্ষত দগদগে বঙ্গ রাজনীতিতে। আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল টাটাদেপ ক্ষতিপূর্ণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায়, সেই ক্ষত আরও প্রকট হয়ে ধরা দিতে শুরু করেছে। দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা চলছে একদিকে। অন্য দিকে, বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ কী করে দেওয়া হবে, ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে কিনা, সেই নিয়েও চলছে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ইচ্ছের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণকে বেআইনি বলে রায় দেওয়ার পরও কোন যুক্তিতে ক্ষতিপূরণ চাইছে টাটারা, তার নেপথ্যেও রয়েছে অন্য এক আখ্যান। (Singur Movement)

সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বঙ্গ রাজনীতিতে ফের সিঙ্গুর ক্ষত দগদগে হয়ে উঠেছে। বামেরা জোর করে জমি কেড়ে নিয়েছিেন মানুষের, তাই ক্ষতিপূরণের দায় তাদের বলে একদিকে যেমন দায় ঠেলা হচ্ছে তৃণমূলের তরফে, তেমনই তৎকালীন বিরোধী দল এবং বর্তমানের শাসকদল রাজ্য থেকে টাটাদের তাড়িয়ে শিল্পের যাবতীয় সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিয়েছেন বলেও উঠছে দাবি। সিঙ্গুর প্রসঙ্গ নতুন করে ফিরে আসতে পরিস্থিতি ফের তেতে ওঠায়, আইনি খুঁটিনাটি নিয়েও তেমন মাথা ঘামাচ্ছেন না অনেকেই। (TATA Group Compensation)

 এত বছর পর যে টাটাদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল ট্রাইব্যুনাল, তার নেপথ্যে রয়েছে একটি চুক্তি। আইনজীবী অভিজিৎ দেব জানিয়েছেন, রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের অনুরোধে টাটারা যখন সিঙ্গুরে জমি নেয়, সেই সময় লিজ ডিড তৈরি হয়েছিল। তাতে শর্ত ছিল যে, টাটার গাফিলতি ছাড়া যদি কোনও কারণে জমি ছেড়ে চলে যেতে হয় শিল্প সংস্থাকে, বাধ্য হয়েই যদি সিঙ্গুর থেকে সরে যেতে হয় তাদের, তাহলে তাদের পুরো ক্ষতিপূরণ দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। টাটাদের কারখানার জন্য অনিচ্ছুক কৃষকদের থেকেও জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়ে আন্দোলন বৃহত্তর আকার ধারণ করে, যার দরুণ সিঙ্গুর ত্য়াগ করতে হয় টাটাদের। অর্থাৎ বাধ্য হয়ে তাদের চলে যেতে হয়। তাই লিজের শর্ত অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে টাটাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: SSKM-এ ভুল চিকিৎসা মমতার! মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য

সম্প্রতি টাটা গোষ্ঠী জানিয়েছে, আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মতো তাদেরকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭৬৫ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরো ক্ষতিপূরণ পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত, ১১ শতাংশ হারে রাজ্য সরকারকে সুদ দিতে হবে। আইনজীবী অভিজিৎ দেবের কথায়, “টাটারা বলেছে, ওরা বাধ্য হয়েছে চলে যেতে। ওদের বিতাড়িত করা হয়েছিল। এই নির্দেশে টাটার রেপুটেশন বজায় থেকেছে।”

টাটাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে, সেই নিয়ে এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে তুঙ্গে তরজা।  বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন,  সিঙ্গুরের তিন ফসলি জমি, সবচেয়ে দামি এবং উর্বর জমি টাটাদের হাতে তুলে দিয়ে ভুল করে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। আবার প্রায় চালু হয়ে যাওয়া সেই কারখানাকে বন্ধ করে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে, বাংলার ক্ষতি হয়েছে।

তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আবার জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণই বেআইনি ছিল বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নিরিখে ক্ষতিপূরণ দিতে হলে সিপিএম দিক। আবার সিপিএম-এর দাবি, ধর্মতলায় মমতার অনশন মঞ্চে এসে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি-র রাজনাথ সিংহ। তৃণমূল-বিজেপি দায়ী টাটাকে তাড়ানোর জন্য। অর্থাৎ বিষয়টি নিয়ে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা চলছেই।



Source link

https://sluicebigheartedpeevish.com/u4j5ka2p?key=f9b1fb0aab078545b23fc443bdb5baad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: