ঘড়াভর্তি মুদ্রার এক পিঠে রাজা, অন্য পিঠে শিব, মহেঞ্জোদারোয় উদ্ধার কুষাণ যুগের ‘গুপ্তধন’


লাহৌর: প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপে ‘গুপ্তধনে’র সন্ধান পেল পাকিস্তান। মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ যে জায়গায়, সেখান থেকেই উদ্ধার হল ওই গুপ্তধন। আজ থেকে নয় নয় করে ২০০০ হাজার বছর পুরনো বিরল তামার মুদ্রা ভর্তি ঘড়া উদ্ধার হল সেখানে। ওই বৌদ্ধ স্তূপের নির্মাণ হয়েছিল কুষাণ বংশের আমলে। সেই সময় ওই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছিল। (Treasure Discovered in Pakistan)

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বে, সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় মহেঞ্জোদারো সভ্যতার নিদর্শন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ নাগাদ ওই শহরটির নির্মাণ হয়েছিল বলে অনুমান ইতিহাসবিদদের। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় রয়েছে মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। মিশর, মেসোপটেমিয়ার মতো মহেঞ্জোদারোকেও বিশ্বের প্রাচীনতম শহর হিসেবে ধরা হয়। (Coin Stash Discovered in Pakistan)

ইতিহাসবিদদের মতে, মহেঞ্জোদারো শহরটির নির্মাণ হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ নাগাদ। ওই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বৌদ্ধ স্তূপেরও ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, মহেঞ্জোদারোর পতনের ১৬০০ বছর পর বৌদ্ধ স্তূপটির নির্মাণ হয়। পাকিস্তানের প্রত্নতত্ত্ববিদ তথা গাইড শেখ জাভেদ আলি সিন্ধি জানিয়েছেন, একটি দেওয়াল ভেঙে পড়ায়, সম্প্রতি নতুন করে ওই এলাকায় খননকার্য শুরু হয়, তাতেই চলতি মাসের শুরুতে মুদ্রা ভর্তি ঘড়াটি উদ্ধার হয়।

মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ নিয়ে যে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা বিভাগ রয়েছে পাকিস্তানে, তার ডিরেক্টর জাভেদ। তিনিই বিষয়টি সামনে এনেছেন। জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া মুদ্রা প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ভাল করে পরিষ্কার করা হবে। তার পর সেগুলি নিয়ে গবেষণা শুরু হবে। এখনও পর্যন্ত যে খবর সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলির রং সবুজ। বাতাসের সংস্পর্শে এসে তামা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তার জন্যই এমন রং ধারণ করেছে তামার মুদ্রাগুলি।

শুধু তাই নয়, শতকের পর শতক ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকায়, ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটায় মুদ্রাগুলি সব গায়ে গায়ে লেপ্টে গিয়ে পিণ্ডের আকার ধারণ করেছে। ওই অবস্থায় মুদ্রাগুলির ওজন ৫.৫ কেজি। তবে পিণ্ড থেকে কিছু মুদ্রাকে আলাদা করে খুলে আনা গিয়েছে। সবমিলিয়ে ১০০০-১৫০০ মুদ্রায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাভেদ। 

আরও পড়ুন: Science News: সূর্যের সঙ্গেই কি মৃত্যু পৃথিবীর, নাকি ত্রাতা হয়ে উঠবে কৃষ্ণগহ্বর? কী বলছে বিজ্ঞান

জাভেদ জানিয়েছেন, একটি-দু’টি মুদ্রা পরিষ্কার করে দেখা গিয়েছে, তার এক পিঠে দাঁড়ানো অবস্থায় এক ব্যক্তির অবয়ব খোদাই করা রয়েছে। কুষাণ সাম্রাজ্যে ওই মুদ্রাগুলির চলন ছিল বাজারে। তাই কোনও কুষাণ রাজারই চেহারা মুদ্রায় খোদাই রয়েছে বলে আপাতত অনুমান গবেষকদের। মুদ্রার অন্য পিঠে, যে চেহারা খোদাই করা রয়েছে, তা হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা শিবের মূর্তি বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আরও কিছু চিহ্ন রয়েছে মুদ্রায়, যার মর্ম উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।

জাভেদ জানিয়েছেন, ১৯৩১ সালের পর এই প্রথম ওই বৌদ্ধ স্তূপ থেকে কিছু উদ্ধার করা গেল। সেই সময় ব্রিটেনের প্রত্নতত্ত্ববিদ আর্নেস্ট ম্যাকে ১০০০ তামার মুদ্রা উদ্ধার করেন সেখান থেকে। ১৯২০-র আশেপাশেও টুকটাক মুদ্রা সেখান থেকে উদ্ধার হয়।

সিন্ধি ভাষায় মহেঞ্জোদারো নামের অর্থ ‘মৃতের স্তূপ’। খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ নাগাদ মহেঞ্জোদারো এবং সিন্ধু উপত্যকায় গড়ে ওঠা সভ্যতার অধীনস্থ একাধিক শহর পরিত্যাগ করে হিমালয়ের দিকে সরে আসেন সেই যুগের মানুষজন। এর পর ১৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কুষাণ সাম্রাজ্যের আমলে সেখানে বৌদ্ধ স্তূপের নির্মাণ হয় বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা। এর পর ভূমিকম্প হলে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ ওই বৌদ্ধ স্তূপও খালি করে দেওয়া হয়। 



Source link

https://sluicebigheartedpeevish.com/u4j5ka2p?key=f9b1fb0aab078545b23fc443bdb5baad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: