একবছরে ৩৩ হাজার কম্পন, বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃত্যুমিছিল, বার বার কেন তুরস্কেই বিপর্যয়


আঙ্কারা: ধ্বংসস্তূপকে ঘিরে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা। তুষারপাত, বৃষ্টির মধ্যে বার বার বিঘ্নিত উদ্ধারকার্য। তাতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তুরস্কে ভূমিকম্পের জেরে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। যত সময় এগোবে, মৃতের সংখ্যা তত বাড়বে, এমনকি প্রায় আটগুণে পৌঁছবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিগত এক শতকে এত বড় বিপর্যয় কখনও নেমে আসেনি তুরস্কে (Turkey-Syria Earthquake)। কিন্তু তুরস্ক এবং পড়শি দেশ সিরিয়ায় পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হল কেন, উঠে আসছে নানা তত্ত্ব (Turkey Earthquake)। 

তুরস্কে ভূমিকম্পের জেরে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে

এখনও পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই অনুযায়ী ৭.৮, ৭.৬ এবং ৬.০ তীব্রতায় তিনটি ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে। তার পর লাগাতার আফটারশক অনুভূত হয়েছে,মঙ্গলবার সারা দিন যা অব্যাহত থেকেছে। কম্পনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, ৪৫৬ কিলোমিটার দূরের সাইপ্রাস, ৮৭৪ কিলোমিটার দূরের লেবানন, ১ হাজার ৩৮১ কিলোমিটার দূরের ইজরায়েল এবং ১ হাজার ৪১১ কিলোমিটার দূরের মিশর পর্যন্ত তার আঁচ গিয়ে পড়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টেয় প্রথম বার কম্পন অনুভূত হয়। দক্ষিণ-মধ্য তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ ছিল যার উৎসস্থল। সেখানে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বাস, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিরীয় শরণার্থীরাও। ২০১১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নেন ওই সব মানুষ জন। 

প্রথম কম্পনের পর কমপক্ষে ৪০টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে ওই এলাকায়। রিখটার স্কেলে তার মধ্যে কোনওটির তীব্রতা ৬.৭ পর্যন্ত ওঠে। এর ন’ঘণ্টা পর আরও দুই ভূমিকম্প ঘটে সেখানে, একটি ৭.৬ এবং অন্যটি ৬.০ তীব্রতায়। তাতেই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে ওই অঞ্চল। তীব্রতার নিরিখে ৭.৮ এবং ৭.৬ তীব্র বলে গন্য হয়। প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে। ধূলিসাৎ হয়ে যায় পর পর কয়েক হাজার বাড়িঘর, নির্মাণ। দু’টুকরো হয়ে যায় হাতেয় বিমানবন্দর। গত ১০০ বছরে এমন তীব্র ভূমিকম্পের নজির নেই তুরস্ক এবং সিরিয়ায়।

  

তুরস্কেই কেন বিধ্বংসী রূপ ভূমিকম্পের

কিন্তু কেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হল সেখানে, উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবেই পরিচিত দেশ। ২০২০ সালেই সে দেশে সবমিলিয়ে ৩৩ হাজার বার কম্পন অনুভূত হয়। এর মধ্যে ৩৩২ বার কম্পনের তীব্রতা ছিল ৪.০-র উপরে। ভৌগলিক অবস্থান, টেকটোনিক পাতের গঠনের জন্যই তুরস্ক ভূমিকম্পপ্রবণ দেশের মধ্যে পড়ে। পৃথিবীর বহির্ভাগ মূলত ১৫টি স্তর নিয়ে গঠিত, যাকে টেকটোনিক পাতও বলা হয়। এই পাতগুলির মধ্যেকার সীমানাই গন্ডগোলের মূলে। সেখানে ফাটল থাকে। এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে একটি পাতের উপর অন্যটি থাকে। একটু এদিক ওদিক হলেই নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। 

আরও পড়ুন: Turkey Earthquake: উদ্ধারকার্যে বাধা ঠান্ডা ও বৃষ্টির,ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নেই কোনও, ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড তুরস্কে তিন মাসের জরুরি অবস্থা

তুরস্ক আনাতোলিয়ান টেকটোনিক পাতের উপর অবস্থিত। ইউরেশিয়ান এবং আফ্রিকান পাতের মধ্যে আঁটোসাটো অবস্থান তার। উত্তরে রয়েছে আরবিয়ান প্লেট, তাতে আরও অবরুদ্ধ অবস্থান। ইউরেশিয়ান এবং আনাতোলিয়ান পাতের সংযোগস্থলে রয়েছে একটি ফাটল, যা নর্থ আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইন হিসেবে পরিচিত, যা বিপর্যয় ডেকে আনে। নর্থ আনাতোলিয়ান ফল্ট ইস্তানবুলের দক্ষিণ থেকে তুরস্কের উত্তর-পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। অতীতেও এর কারণে একাধিক বার বিপর্যয় নেমে এসেছে। ১৯৯৯ সালে ৭.৪ এবং ৭.০ তীব্রতায় দু’টি ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছিল চারিদিক। সে বার মৃত্যু হয় ১৮ হাজার মানুষের। আহত হন ৪৫ হাজার মানুষ। ২০১১ সালেও ৭.১ তীব্রতায় ভূমিকম্প হলে ৫০০-র বেশি মানুষ মারা যান। 

বিপজ্জনক অবস্থানই কি বিপর্যয়ের জন্য় দায়ী!

এর পাশাপাশি, ইস্ট আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইনও উদ্বেগের কারণ। আনাতোলিয়ান পাত এবং আরাবিয়ান পাতের মধ্যে রয়েছে সেটি, তুরস্কের পূর্ব থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ৬৫০ কিলোমিটার তার বিস্তার। এ ছাড়াও এজিয়ান সমুদ্র পাত রয়েছে, ভূমধ্যসাগরের পূর্বে যা অবস্থান, তুরস্কের পশ্চিমে এবং গ্রিসের দক্ষিণে। ওই অঞ্চলে ভূমিকম্পের জন্য দায়ী এই এজিয়ান সমুদ্র পাত। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তুরস্কের ৯৫ শতাংশ স্থলভাগই ভূমিকম্পপ্রবণ, যার এক তৃতীয়াংশ আবার অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ইস্তানবুল, ইজমির এবং পূর্ব আনাতোলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। 

এর আগে একাধিক বার বিধ্বংসী ভূমিকম্প হলেও, এ বারের ভয়াবহতা আগের সব হিসেব ছাপিয়ে গিয়েছে

কিন্তু এর আগে একাধিক বার বিধ্বংসী ভূমিকম্প হলেও, এ বারের ভয়াবহতা আগের সব হিসেব ছাপিয়ে গিয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তুরস্কে ৩০ হাজার ৬৭৩ বার ভূমিকম্প হয়। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র দু’বারই কম্পনের তরঙ্গে তীব্রতা এ বারের মতো ছিল।  ১৯৩৯ সালে ৮.০ তীব্রতায় ভূমিকম্প হয়েছিল তুরস্কে, সে বার উৎসস্থল ছিল পূর্বের ইরজিনকান। প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন তাতে। ভেঙে পড়েছিল ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৭২০টি বাড়িঘর। ১৯৩৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত পাঁচটি তীব্র ভূমিকম্প হয়। ১৯৯৯ সালের অগাস্টে আনাতোলিয়ান ফল্টে ৭.৪ তীব্রতায় ভূমিকম্প হয়। সে বার ১৭ হাজার মানুষ মারা যান। ১৯০০ সাল থেকে ৭৪৬বার ভূমিকম্পে সেখানে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ ভূমিকম্পের কবলে পড়ে মারা গিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয় ২৫০০ কোটি ডলারের। 



Source link

https://sluicebigheartedpeevish.com/u4j5ka2p?key=f9b1fb0aab078545b23fc443bdb5baad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: